শিশু অধিকার হলো এমন কিছু মৌলিক অধিকার যা শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। শিশুদের সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি দেশের ভবিষ্যৎকে শক্তিশালী করা যায়। এই অধিকারগুলো জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে (CRC) বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ১৯৮৯ সালে গৃহীত হয় এবং বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এই সনদে স্বাক্ষর করেছে।
শিশু অধিকার কেন গুরুত্বপূর্ণ
শিশুরা সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ। তাদের সঠিক যত্ন ও সুরক্ষা না পেলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অধিকারের অভাবে শিশুরা অপুষ্টি, নিরক্ষরতা, শিশুশ্রম, নির্যাতন ও মানব পাচারের শিকার হতে পারে। এজন্য শিশুদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা শুধু একটি মানবিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি জাতির উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
শিশু অধিকারগুলোকে চারটি মূলভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে:
১. জীবনধারার অধিকার: শিশুদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, এবং নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা।
২. উন্নয়নের অধিকার: শিক্ষা, খেলা এবং মানসিক বিকাশের সুযোগ পাওয়া।
৩. সুরক্ষার অধিকার: নির্যাতন, শিশুশ্রম, এবং বৈষম্যের হাত থেকে সুরক্ষা।
৪. অংশগ্রহণের অধিকার: নিজের মত প্রকাশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ এবং সমাজের কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।
বাংলাদেশে শিশু অধিকার সুরক্ষার জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিশু শ্রম নিষিদ্ধ, বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান, এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন এদেশে কার্যকর রয়েছে। তবুও অনেক শিশু এখনও দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিশেষত গ্রামীণ ও দরিদ্র পরিবারগুলোর শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
শিশু অধিকার রক্ষায় আমাদের ভূমিকা
শিশু অধিকার রক্ষায় ব্যাক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
পরিবারের ভূমিকা: শিশুর প্রতি যত্নবান হওয়া, তাদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে মূল্য দেওয়া।
সমাজের ভূমিকা: শিশুশ্রম বা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং প্রতিবেশী শিশুদের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসা।
রাষ্ট্রের ভূমিকা: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিশুর সুরক্ষায় শক্তিশালী আইন প্রণয়ন ও তা কার্যকর করা।
শিশু অধিকার নিশ্চিত করা মানেই একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও মানবিক ভবিষ্যৎ গড়া। শিশুরা আজকের পৃথিবীর আগামী দিনের পথপ্রদর্শক। তাদের অধিকার রক্ষা করতে পারলেই তারা পূর্ণ সম্ভাবনায় বিকশিত হতে পারবে এবং দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই, আসুন আমরা সবাই মিলে শিশু অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হই।
উক্ত বিষয় নিয়ে নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইয়ুথ ফর চিলড্রেন যা নড়াইল জেলার শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেইঞ্জ মেকারের সহযোগিতায় আশিকুর রহমান সৌরভ আয়োজন করেন, শিশুদের অধিকার নিয়ে সেশন।